বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ১০০তম জন্মদিন আজ। এ বছর বর্ণাঢ্য আয়োজনে সুলতানের জন্মশতবর্ষ পালনে নড়াইলে সুলতান প্রেমী বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র কোরআন খতম এবং সুলতানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে কর্মসূচি। এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মাদ আশফাকুল হক চৌধুরী। তিনি এ ব্যাপারে আর কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এদিকে, সুলতানের জন্মবর্ষ নিয়ে চলছে বিভ্রান্তি। এস.এম সুলতান ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়রা জানান, ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায় রাজমিস্ত্রি মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিল্পীর জন্মবার্ষিকী, সুলতান উৎসব ও সুলতান মেলা, সুলতান স্বর্ণ পদক, তার ওপর লেখা বিভিন্ন বই, সুলতানের নামে স্মরণিকা এবং শিল্পীর কবরে জন্ম বছর হিসেবে ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট লেখা রয়েছে। শিল্পী সুলতানের সমস্ত কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান সেই হিসেবেই পালন হয়ে থাকে। অর্থাৎ এ হিসেবে এবার সুলতানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী।
প্রসঙ্গত, নড়াইল জেলা প্রশাসন ও এস.এম সুলতান ফাউন্ডেশন গত বছর শিল্পীর ৯৯তম জন্মজয়ন্তী হিসেবে দিনটি পালনের প্রস্তুতি গ্রহন করে। কিন্তু বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর কারণে তা পারেনি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট জাঁকজমকপূর্ণভাবে এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষ পালন করে। তবে নড়াইলের সুলতানপ্রেমীরা তা প্রত্যাখ্যান করে শিল্পী সুলতানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী পালন করেন।
এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের সভাপতি মলয় কুন্ডু ও সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু বলেন, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, নিয়ম এবং জেলা প্রশাসনের মতামত না নিয়ে লিয়াকত আলী লাকী গত বছর সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করায় সুলতানপ্রেমীরা হতাশ হয়। এ ঘটনায় নড়াইলবাসী প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি।
এ বিষয়ে এস এম সুলতান সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জি জানান, নড়াইলে শিল্পী সুলতানের সমাধিস্থলে জন্মদিন হিসেবে ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট লেখা রয়েছে। তাছাড়া নড়াইলবাসী বরাবরই এই দিনটি ধরেই অনুষ্ঠান করে থাকে এবং সমস্ত চিঠি বা স্মরণিকা প্রকাশ কওে থাকে। বিভিন্ন বইয়ে আবার শিল্পীর জন্মদিন হিসেবে ১৯২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর লেখা রয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এ হিসেবে শিল্পীর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করে।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে ১৯৮২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকায় সংগ্রহশালা চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এসএম সুলতান।