রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ঘাঘট নদের আট কিলোমিটার অংশে অন্তত ৫০ পয়েন্টে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। এতে নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে আশপাশের ফসলি জমি। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে আবাসন প্রকল্পসহ ঘরবাড়ি। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্য দলের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে বালু তোলায় নেমেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, গঙ্গাচড়ার আলমবিদিতর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি বাজার থেকে উপজেলার শেষ সীমানা ধনতোলা পর্যন্ত ঘাঘট নদের প্রায় আট কিলোমিটার অংশের দু’পাশে অন্তত ৫০টি স্থানে ড্রেজার বসানো হয়েছে। এর মধ্যে আলমবিদিতর ইউনিয়নের মেছনিকুণ্ডা এলাকায় আবাসন প্রকল্পের কাছেই বালু উত্তোলন করছিলেন লাভলু মিয়া ও রফিক মিয়া নামে দু’জন। তারা নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক দলের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমরা স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল মিলে বালুর ব্যবসা করছি। কোনো সমস্যা নেই। এখন আমরাই তো সব।
এক ড্রেজারের মালিক রিপন মিয়া দাবি করেন, বাড়ির জমি উঁচু করতে কেউ কেউ কিছু বালু তুলছেন। কিন্তু এই এলাকার প্রধান বালু ব্যবসায়ী পাইকান দোলাপাড়ার হামিদুল ইসলাম। তিনি প্রতিদিন একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলেন। কয়েক দিন আগেও কবর ভরাটের কথা বলে প্রায় ১ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন।
তবে বালু ব্যবসায়ী হামিদুল বলেন, আমার বাড়ি নদীভাঙনের হুমকিতে পড়েছিল। এজন্য ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে আমাকে ৭০০ জিও ব্যাগ দেওয়া হয়। ওই জিও ব্যাগ ভর্তি করার জন্য ঘাঘট থেকে বালু তুলেছি। অবশ্য কিছু বালু বিক্রি করেছেন বলেও জানান।
বড়াইবাড়ি এলাকার নুর মোহাম্মদ, একরামুল হকসহ কয়েকজন জানান, ঘাঘট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় এলাকার আবাদি জমি বিলীন হচ্ছে। আগে নদটি থেকে এত ব্যাপকভাবে বালু তোলা হতো না। তবে সরকার পতনের পর অনেকে বালু ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন। তারা প্রতিদিন নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন। পুলিশ এ প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি। তারা এসে শুধু ঘুরে যায়, কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না।
স্বেচ্ছাসেবক দলের পরিচয়ে বালু উত্তোলন করা রফিকের বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রঞ্জু মিয়া বলেন, রফিক আমাদের দলের ছেলে। তবে দলের পরিচয় দিয়ে কোথাও কোনো অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, এরই মধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ড্রেজার মেশিন, ট্রাক জব্দসহ জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।