রান্নাঘর ঘরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাসার কোনো অংশ ব্যবহার হোক কিংবা না হোক, এই অংশ প্রতিদিন ব্যবহৃত হয়। আর যেহেতু এখানে আমাদের খাবার রান্না হয়ে থাকে, তাই এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। কিন্তু রান্না করার পর অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং অপরিষ্কারই রেখে দেন। কিন্তু এটি মোটেই ঠিক নয়। কারণ ময়লা থেকে তৈরি হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু। চলুন জেনে নেওয়া যাক, রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার সহজ উপায়-
সিঙ্ক ও বেসিন ঝকঝকে রাখুন
সারাদিনের বিভিন্ন ধোয়ামোছার পর সিঙ্ক কিংবা বেসিন জ্যাম হয়ে যেতে পারে। এতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। কাজের শেষে তাই সম্ভব হলে সিঙ্কে গরম পানি ঢেলে দিন। খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে প্লাস্টিকের পাইপের ক্ষতি হতে পারে। তবে প্লাস্টিকের জন্য সহনীয় পর্যায় পর্যন্ত গরম পানি ব্যবহার করলে যে কোনো কারণে পাইপ জ্যাম হয়ে গেলে তা ঠিক হয়ে যাবে। সবশেষে লিকুইড সাবান কিংবা ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে তা দিয়ে সিঙ্কের পুরোটা পরিষ্কার করে নিন। তেলতেলে ভাব কমানোর জন্য সিঙ্কের মধ্যে ভিনেগার ছড়িয়ে দিয়ে তাতে লেবুর রস ও কয়েক টুকরো লেবু রেখে দিন। ১০ মিনিট পর ঘষে ধুয়ে ফেলুন। এতে সিঙ্কের চকচকে ভাব ফিরে আসবে।
রান্নাঘরের স্ল্যাব ক্লিন করুন
প্রতিদিন রান্না করার সময় মশলা বা তরকারি চুলায় ও স্ল্যাবে পড়তে পারে। এই দাগ একবার বসে গেলে ওঠানো খুব কষ্টকর। তাছাড়া স্ল্যাবও তেল চিটচিটে হয়ে যায়। তাই প্রতিবার রান্না শেষ করে চুলা ও স্ল্যাব ক্লিন করে নিন। ক্লিন করার জন্য গরম পানিতে বাসন পরিষ্কারের লিকুইড সাবান ও এক চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। পানিতে কাপড় ভিজিয়ে চুলার আশেপাশে এবং স্ল্যাব পরিষ্কার করা হলে শুকনো আরেকটি কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন।
আঁশটে গন্ধ দূর করুন
মাছ কাটাকুটি করা হলে স্বাভাবিকভাবেই রান্নাঘরে কিছুটা আঁশটে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে মাছের আঁশ আর অন্যান্য আবর্জনা আগে পলিথিনে ভরে মুখ বন্ধ করে তারপর ময়লার ঝুড়িতে রাখুন। মাছ কাটার সময় পুরাতন পত্রিকা বা পলিথিন বিছিয়ে রাখতে পারেন। এতে মেঝে নোংরা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। মাছ-মাংস কাটার পর যদি রান্নাঘরে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে তবে পানিতে কিছুটা দারুচিনি রেখে ফুটিয়ে নিন। এতে ঘরের দুর্গন্ধ কমে আসবে। চাইলে এয়ার ফ্রেশনারও ব্যবহার করতে পারেন।
রান্নাঘরের চকচকে ভাব ধরে রাখুন
রান্নাঘরে স্টেইনলেস স্টিলের সিঙ্ক পরিষ্কার করার পর কাপড়ে খানিকটা অলিভ অয়েল কিংবা কোকোনাট লাগিয়ে তা দিয়ে সিঙ্ক মুছে নিতে পারেন। রান্নাঘরের কোনো পাত্র চকচকে রাখতে চাইলেও এই পদ্ধতি ফলো করতে পারেন। কাঠের জিনিসের চকচকে ভাব ধরে রাখতে চাইলে কিছুটা লবণ ছিটিয়ে তাতে অল্প লেবুর রস দিয়ে হালকা ঘষে নিন। রান্নাঘরের প্রতিটি জিনিস যখন পরিষ্কার থাকবে তখন এমনিতেই চকচকে ভাব বজায় থাকবে।
টাইলস পরিষ্কার করুন
চুলার আশেপাশের দেয়ালে তেল চিটচিটে টাইলস পরিষ্কারের জন্য বেকিং সোডা ও লেবু বেশ কার্যকরী। বেকিং সোডার পেস্ট তৈরি করে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এরপর টাইলসে থাকা দাগের উপর পেস্টটি লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার করে নিতে হবে। এতে করে টাইলসের তৈলাক্ত ভাব আর দাগ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
জমিয়ে রাখবেন না কোনোকিছুই
ভাজা পোড়ার পুরাতন তেল হোক কিংবা এঁটো থালাবাসন, রান্নাঘরের কোনো কাজই জমিয়ে রাখা উচিত নয়। চেষ্টা করুন, এঁটো থালাবাসন অন্তত খানিকটা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে। পরে নিজের সুবিধামত সময়ে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। এছাড়া প্রতিদিন ২০-২৫ মিনিট বরাদ্দ রাখুন সিঙ্ক ও চুলার আশেপাশের এরিয়া পরিষ্কারের জন্য। এসব স্থান ব্যবহার হয় বেশি, তাই খুব সহজে দাগ বসে যেতে পারে। তাই এই জায়গাগুলো প্রতিদিন ক্লিন করে নেয়াই ভালো।
রান্নাঘর গোছানো ও পরিষ্কার রাখতে কেবিনেট ক্লিন করা
কিচেন কেবিনেটে যদি রঙ করা থাকে, তবে সেখানকার দাগ পরিষ্কার করতে বেকিং সোডা সবচেয়ে কার্যকরী। একটি বাটিতে বেকিং সোডা আর পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার পেস্ট দাগের উপর রেখে সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিন। কাঠের কেবিনেটের জন্য যে সুতি কাপড় ব্যবহার করবেন খেয়াল রাখবেন সেটি যেন খুব ভেজা না হয়। এতে কাঠ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কেবিনেটে যদি কাঁচ থাকে তাহলে সুতি কাপড়ে গ্লাস ক্লিনার নিয়ে ভেতরে ও বাইরে দুই দিক থেকেই ক্লিন করুন। কেবিনেট যেমন রান্নাঘরের শোভা বাড়ায়, তেমনই এটি ক্লিন না রাখলে দেখতেও ভালো লাগে না। তাই কাঠের বা কাঁচের কেবিনেট যাই হোক না কেন, নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি।