নড়াইল কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (সহকারী মহাব্যবস্থাপক ) প্রতাপ কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নিজ আর্থিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মামাতো ভাইয়ের নামে অস্তিত্বহীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ১০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বেচছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (২৫ জুন) তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নিতে মো: আলমগীর হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী গ্রাহক ব্যাংকটির সর্বোচ্চ নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে বাংলাদশ ব্যাংকের নির্দশনা (সার্কুলার) উপেক্ষা করে কৃষি ব্যাংকের নড়াইল আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রতাপ কুমার বিশ্বাসের আপন মামাতো ভাই শক্তিপদ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী তন্দ্রা রায়কে অস্তিত্বহীন ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্র্মের” সত্ত্বাধিকারী সাজিয়ে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে ১০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করে বিস্ময়করভাবে চরম অনিয়ম করেছেন। বাস্তব ‘‘বিশ্বাস ডেইরি ফার্ম’ নামে কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই।
আর্থিক প্রণোদনা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় শুধু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তা এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের নামে বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশের ৪ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা এবং বাকি ৫ শতাংশ সরকার থেকে সংশিষ্ট ব্যাংক ভর্তুকি হিসেবে পাবে। অথচ এ নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (আরএম) প্রতাপ কুমার বিশ্বাস আপনজনের নামে অস্তিত্বহীন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী সাজিয়ে ১০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছেন! ঋণ মঞ্জুরীপত্রে দেখা যায়, জেলার সদর উপজেলার রায়খালী গ্রামে অবস্থিত কথিত ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্ম” এর জন্য ঋণের আবেদন করেন তন্দ্রা রায় ও তাঁর স্বামী শক্তিপদ বিশ্বাস নামে এক দম্পতি। প্রকৃতপক্ষে, তারা হলেন যথাক্রমে নড়াইল সরকারি উচ বিদ্যালয়ের গণিতের সিনিয়র শিক্ষক শক্তিপদ বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী বল্লারটপ আইডিয়াল কলেজের প্রভাষক তন্দ্রা রায়। ঋণগ্রহীতাগণ চাকুরিজীবী হলেও তাদেরকে ভুয়া খামারি সাজানো হয়েছে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরএম প্রতাপ কুমার বিশ্বাসের আর্থিক সর্বোচ্চ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০২৩ সালের ৩০ মে মেসার্স ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্মের”অনুকূলে ১০ লাখ টাকা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই খাতে চলতি মূলধন ঋণ মঞ্জুর করা হয়।যার ঋণ হিসাব নং ২২০১-০১৩৪০০১৬৯৮। এ ঋণের মঞ্জুরিপত্রের ৯ নম্বর শর্ত মোতাবেক ঋণের টাকা দিয়ে দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য সামগ্রী ক্রয় ও খামার পরিচালনার কাজে ব্যয় করতে হবে। কি ঋণ গ্রহীতাগণের তা কোন খামারই নেই। অতীতও ছিল না। কাজেই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবহৃত ঠিকানায় সরজমিনে গেলে সেখানে এ ধরণের কোন খামার বা প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রমও। ফলে এটি সম্পূর্ণই একটি কাগুজে ভুয়া প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের ঋণপত্র বা ঋণ মঞ্জুরীপত্র প্রতিষ্ঠানটির যে নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, এটি কথিত ঋণগ্রহীতাগণের পৈত্রিক বাড়ি হলেও ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্ম” নামের কোন খামার কিংবা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে,এই ঠিকানায় ঋণ গ্রহীতার বৃদ্ধা বাবা-মা বসবাস করেন।
কথিত ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্মের” সত্ত্বাধিকারী শক্তিপদ বিশ্বাসের বাবা সদানন্দ বিশ্বাস ও সুনিতী বিশ্বাস বলেন,‘আমাদের কোন ডেইরী ফার্ম নেই। অতীতেও ছিল না। প্রায় ১০ বছর আগে একটি মাত্র গরু পালন করতেন তারা।’
দুর্নীতিপরায়ণ আরএম প্রতাপ কুমার বিশ্বাস তাঁর আতীয়ের নামে অস্তিত্বহীন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয় ঋণ নিয়ে নিজেই ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী অভিযোগকারী।
অভিযোগপত্রেে আরে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের অর্থ বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়েছেন আরএম প্রতাপ কুমার বিশ্বাস। আবার ৩০ শতাংশ বরাদ্দ থাকলেও প্রণোদনার টাকা জেলার প্রকৃত নারী উদ্যোক্তাকে না দিয়ে নিজের মামাতো ভাইয়ের স্ত্রীকে ভুয়া নারী উদ্যোক্তা সাজিয়ে ঋণ বিতরণ করেছেন। অথচ করোনার প্রভাবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতাল সড়ক অবস্থিত মেসার্স গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সত্ত্বাধিকারীগণ গৌরপদ তরফদার ও পল্লব কুমার ওরফে বাবলু তরফদার প্রণোদনার ঋণ পেতে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল আবেদন করেন। যার ঋণ কেস (এলসি) নং-৫৫। আরএম প্রতাপ কুমার বিশ্বাস এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ প্রদানে নানা ধরণের টাল-বাহানা করে তাঁর (প্রতাপের) অনৈতিক দাবি পূরণ না হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস আটকে রেখে ফাইলটি ফেরত দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন।এভাবে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৪ শতাংশ সুদ ঘোষিত ঋণের অর্থ পাননি প্রকত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, প্রতাপ কুমার বিশ্বাস কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদানের পর থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাঁর আর্থিক ক্ষমতায় নামমাত্র প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ভুয়া কাগজপত্রে কয়েক কোটি টাকা ঋণ বিতরণসহ তার নানান নেতিবাচক কর্মকান্ডে অতিষ্ট উপকারভোগীরা। এমনকি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীও তার হুমকি-ধামকিতে অতিষ্ট ।
অভিযোগ রয়েছে, কথায় কথায় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গালমন্দ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। ইতিমধ্যে কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীকে চাকরিচ্যুতও করেছেন তিনি। পছন্দের লোককে ঋণ না দিলে সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মীকে মানসিক নির্যাতন করেন। এমনকি মাঠকর্মীদরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাখায় বদলি করে আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটান।
এ বিষয় জানতে কথিত ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্মের” সত্ত্বাধিকারী শক্তিপদ বিশ্বাস বলেন, ১০ লক্ষ টাকা আমি ঋণ নিয়েছিলাম। পরে যখন বুঝতে পারলাম সরকারি চাকরি করে এই ধরনের লোন নেয়া ঠিক হবে না। তখন আমি আনুমানিক পাঁচ মাস পরে পরিশোধ করে দিয়েছি। আর ডেইরি ফার্মটি এখন আর নেই।
নড়াইল কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (সরকারি মহা ব্যবস্থাপক) প্রতাপ কুমার বিশ্বাস বলেন,এই ১০ লক্ষ ঋণের টাকার বিষয়ে বলেন, এটা আমার ক্ষমতার বাইরে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আর করোনা কালীন সময় আমি নড়াইলে ছিলাম না। ###