বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাবেদ রেজা বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সবসময় জনগণের পাশে ছিল।
স্বৈরাচার এরশাদ সরকারকে হটিয়ে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতা আসে। মঈন উদ্দিন ও ফখরুদ্দিন কে ভর করে ২০০৮ সালে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় এসে ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশের মানুষকে সীমাহীন নির্যাতন, হামলা-মামলা, খুন, গুম করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আমরা নতুন একটি দেশ ও স্বাধীনতা পেলাম৷ ২০২৪ সালের ছাত্র বিপ্লবের নেপথ্যে ছিল তারেক রহমান।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বান্দরবানের লামা উপজেলার পরিষদ চত্বরে লামা উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সচেতনতামূলক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়ার সময় এইসব কথা বলেন জাবেদ রেজা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, লামা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রব।
জাবেদ রেজা আরো বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে জিয়া পরিবারকে। তারেক ও আরাফাত রহমান কোকো কে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়েছিল। এক সন্তান হারিয়ে আরেক সন্তানকে দূরে রেখেও খালেদা জিয়াকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে মাথানত করেনি। এমনকি আরাফাত রহমান কোকোর লাশ সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে দাফন করতে দেয়নি। খালেদা জিয়াকে প্রস্তাব দেয়া হয় তিনি দেশ ছেড়ে দিলে লাশ দাফন করা হবে। তিনি রাজি হয়নি বরং তাদের নির্যাতন মেনে নেন। মাত্র দুই কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ এনে তাকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মৃত্যুর দরজায় পৌঁছার ব্যবস্থা করা হয়। জিয়া পরিবারকে দেশ ত্যাগের প্রস্তাব দেয়া হয় মেনে নেয়নি খালেদা জিয়া।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা ধর্মের দোহাই দিয়ে ২০০৬ সালে মাথায় পট্টি লাগিয়ে ভোট চায়। ভোটে জেতার পর আসল চেহারা বের হল। যার ঘরে নাস্তিকে ভরা, তারা ইসলাম বিশ্বাস করে না। আগে শীতের মৌসুম আসলে শহর, গ্রামে ওয়াজ হত, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার প্রশাসন দিয়ে ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে নেয়। অথচ তারা বেরাইটিশো, গান বাজনার অনুষ্ঠান করলে অনুমতি দিত। গত ১৬ বছর যেসব আলেম ওলামা ধর্মের কথা বলেছে তাদের জেল, খুন ও হত্যা করা হয়েছে। সাঈদী সাহেবকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়। ডাক্তারের মাধ্যমে তার শরীরে বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করা হয়। জামায়াতের নেতাদের যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কে হত্যা করা হয়েছিল। এইসব হত্যা, গুম ও নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার বিচার করা হবে।
ভোট চোররা এখন দেশে নেই। ইউএনও ওসির নেতৃত্বে ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতারা রাতের আঁধারে ব্যালেটে ছিল মেরেছে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে আওয়ামী লীগ কোন কাজ করেনি। বিএনপি আওয়ামী লীগের মত ভোট চুরি করে নয়, জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে চায়। তিনি দলের নেতাকর্মীকে নতুন ইউএনও ওসিকে সহায়তা করতে বলেন। আগামীতে তাদের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে।
ঘরের আত্মকোন্দল নিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির দলাদলির কারণে ৮০০ ভোট কম পেয়ে ২০০৮ সালে ম্যামাচিং হেরে যায়। সাছিংপ্রু ১৪ হাজার ভোট নিয়ে দলের ক্ষতি করে। বিএনপি কে কেউ পৈত্রিক সম্পত্তি বানাবেন না। এখানে কোন রাজা নেয়। বিএনপির রাজা তারেক রহমান, আমরা সবাই প্রজা। আসুন দলাদলি ভুলে সবাই এক পতাকার তলে দাঁড়ায়। যারা আজ দলের বাহিরে গিয়ে নিজেকে দলের পরিচয় দেয়, তারা পাগল। কেন নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেন ? ওরা ঠোঙা নিয়ে ঘুরে আমরা যোগ্য ওয়ারিশ নিয়ে ঘুরি। কেন্দ্রীয় বিএনপি আপনাকে নেতৃত্ব দিলে আমি আপনার সাথে কাজ করবো। রাজনীতি আমার ব্যবসা নয়। আমার বানা বোন মরেছে, আমি জানাজায় অংশ নিতে পারিনি। আসুন সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা সবাই তারেক রহমানের নির্দেশে কাজ করি।। আমাদের ভেদাভেদের কারণে নেতাকর্মীরা কষ্টে আছে।
লামা বিএনপির উর্বর ভূমি। এখানের মানুষ ধানের শীষ ছাড়া কিছু বুঝেনা। আমাদের বয়স হয়েছে, আমি আপনি মরে গেলে কে বিএনপির দায়িত্ব নিবে। লামা থেকে একজন সদস্য জেলা পরিষদে নেয়া হয়নি। এই ব্যর্থতা আমাদের। জেলা পর্যায়ে লামার কথা কে বলবে। আব্দুর রব ও মো. জাহাঙ্গীর লামা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
নেতৃত্ব কে দিবে এই ফায়সালা আসে আসমান থেকে। মানুষ মৃত্যুর পর কিছুই নিতে পারেনা। শুধু তার আমল সাথে যায়। দোয়ার কারণে মানুষের ভাগ্য আল্লাহ চাইলে পরিবর্তন করে দিতে পারে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আত্ম অহংকারে কারণে মানুষ ধ্বংস হয়। আল্লাহ যেন আমাকে অহংকার আর লোভ লালসা থেকে আল্লাহ যেন আমাকে বাহিরে রাখে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে লামায় উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন হবে। যারা অভিমান করে এতদিন দূরে ছিল সবাইকে কাছে আসার আহ্বান করেন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন তুষার, লামা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক লামা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আকী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহীন, লামা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. সাইফুদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বশির আহাম্মদ, মো. জাকের হোসেন সহ প্রমুখ। এসময় লামা উপজেলা পরিষদ চত্বরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
মুনতাসির/সাএ