সিরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিসরে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে তৎপর ইসলামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পটভূমিতে নিজেকে সিরিয়ার সম্ভাব্য নতুন নেতৃত্ব হিসেবে উপস্থাপন করছেন তিনি।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে তাদের শক্তিশালী অবস্থান থেকে শুরু হওয়া আকস্মিক আক্রমণ সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা ও হোমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখল করতে সহায়তা করেছে। এ আক্রমণ আসাদ সরকারের পতনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
হায়াত তাহরির আল-শাম: উত্থান ও পরিবর্তন
২০১১ সালে আল-কায়েদার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাবহাত আল-নুসরা নামে প্রতিষ্ঠিত হয় হায়াত তাহরির আল-শাম। পরে সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে এইচটিএস রাখা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রথম থেকেই এটি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের মধ্যে অন্যতম কার্যকর এবং ভয়ঙ্কর একটি সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
এইচটিএস বর্তমানে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় রয়েছে। তবে এর নেতা আল-জুলানি পরে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি জাবহাত আল-নুসরা বিলুপ্ত করে এইচটিএস গঠন করেন এবং আরও কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে এর সঙ্গে যুক্ত করেন।
অতীতে এইচটিএস বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বার্তায় সম্প্রীতি ও সহিংসতা এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, তবে এ নিয়ে সন্দেহ এখনও পুরোপুরি দূর হয়নি।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রশ্ন
সিরিয়ার জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করলেও এইচটিএস মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তারা বিদ্রোহীদের মধ্যে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় বিভিন্ন সময় বিরোধীদের দমন করেছে।
অন্যদিকে, আসাদ সরকারের পতন সত্ত্বেও সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিভাজন পুরোপুরি মেটেনি। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ রয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে আরও সংঘাতের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শক্তির ভূমিকা ও সিরিয়ার ভবিষ্যৎ
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো শুধু এইচটিএস-এর পরিকল্পনা ও সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে না। বরং, ইরান, রাশিয়া, তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ।
ইরান ও রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে আসাদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে এসেছে, অন্যদিকে তুরস্ক বিদ্রোহীদের পক্ষে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনও সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে।
আন্তর্জাতিক এ শক্তিগুলো সিরিয়ার রাজনৈতিক ভারসাম্যে তাদের নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থ বজায় রাখতে নতুন পরিকল্পনায় এগোচ্ছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত
আসাদ সরকারের পতনের ফলে সিরিয়ার রাজনৈতিক পটভূমিতে নতুন বিদ্রোহী নেতৃত্বের উত্থান হলেও, তাদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকে গেছে। বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ এবং নিয়ন্ত্রণের লড়াই দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়াতে পারে।
সূত্র: বিবিসি