সুদূর ডেনমার্ক থেকে সুসংবাদটি শুনতে পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে লাল সবুজ দলে খেলে যাচ্ছেন। এতদিন ৩৪ বছর বয়সী মিডফিল্ডার ছিলেন দেশের ফুটবলের অন্যতম আইডল। এবার তার উত্তরসূরী হয়ে জায়গা নেওয়ার অপেক্ষায় আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হামজা চৌধুরী। ফিফা থেকে ছাড়পত্র পাওয়ায় বাংলাদেশ দলে খেলা এখন ২৭ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের জন্য শুধুই সময়ের ব্যাপার।
ইংলিশ এফএ ও সবশেষ ফিফার ফুটবল ট্রাইব্যুনালের প্লেয়ার স্ট্যাটাস চেম্বার থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি পাওয়া হামজা চৌধুরীকে ঘিরে ক্রীড়াঙ্গনে উচ্ছ্বাস কম নয়। দেশের ফুটবলে হঠাৎ যেন বইছে আনন্দের ঢেউ । জামাল ভূঁইয়া যেন এমনই এক সুসংবাদের অপেক্ষায় ছিলেন। বাংলা ট্রিবিউনকে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো খবর। এই খবরের জন্য দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছিলাম। হামজার বাংলাদেশ দলে খেলতে কোনও বাধা নেই। এটা আমাদের ফুটবলের জন্য বড় খবর। পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় দলের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।’
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা ২০১৫ সালে যোগ দেন লেস্টার সিটিতে। তবে পরের বছর ধারে যোগ দেন বার্টন অ্যালবিয়ন, সেখানে কাটান ২০১৭ সাল পর্যন্ত। গত মৌসুমে ওয়াটফোর্ডে ধারে খেলেছেন ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার। লেস্টার সিটির সঙ্গে হামজার চুক্তি রয়েছে আরও তিনবছর ২০২৭ সাল পর্যন্ত। এমন উঁচুমানের ফুটবলার লাল সবুজ দলে খেলতে পারলে সবার উন্নতি দেখছেন জামাল,‘আমি তো মনে করি সব দিক দিয়ে ওর কাছ থেকে শেখার আছে। সে কীভাবে মানিয়ে নেয়, কীভাবে নিজেকে ধারালো রাখে… আরও অনেক কিছু।’
শুধু হামজার কাছ থেকে তপু-মোরসালিনরা শিখবেন তা কিন্তু নয়। হামজারও এখানকার খেলোয়াড়দের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগ দেখছেন ৩৪ বছর বয়সী তারকা, ‘সে আমাদের ফুটবলার থেকে পরামর্শ নিতে পারে। উপদেশও বলা যায়। কারণ এশিয়া ও ইংল্যান্ডের আবহাওয়া এক নয়। ভিন্নতা আছে।’
জামালের পথ অনুসরণ করে তারিক কাজী খেলছেন। হামজাকে দেখে অন্যরাও লাল সবুজ দলে খেলার জন্য আরও আগ্রহী হবেন বলে জামালের বিশ্বাস, ‘হামজা খেললে জাতীয় দল বেশ উপকৃত হতো। আশা করছি, ওকে দেখে দেশের বাইরে খেলা আরও ফুটবলার আসবে। কেননা হামজা বাংলাদেশের ফুটবলে এখন নতুন আইডল হতে যাচ্ছে । আগে আমি ছিলাম। এখন ওকে দেখে বাংলাদেশের ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে।’
বাংলাদেশের ফুটবলে একসময় কোচ থাকা ইংলিশ জেমি ডেও দারুণ খুশি। বাংলাদেশ দলে খেলার জন্য ফিফা থেকে ছাড়পত্র পাওয়া হামজা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এটা দারুণ খবর। সমর্থকদের জন্যও।’
হামজার লাল সবুজ দলে অন্তর্ভুক্তি হলে আদতে বাংলাদেশের ফুটবল লাভবান হবে সেটাও মনে করিয়ে দিলেন ইংলিশ কোচ,‘সে অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ দলে খেলবে। তার টেকনিক্যাল সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। আমি নিশ্চিত যা অন্য খেলোয়াড়দের সহায়তা করবে, তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। যা পারফরম্যান্স ও ফলে প্রভাব পড়বে বলে মনে করি।’
হামজা উঁচুমানের ফুটবলার হলেও জাতীয় দলের ডিফেন্ডার তপু বর্মণ বলছেন অন্য কথা, ‘হামজা ও আমাদের লিগের মান ভিন্ন। ফিফা উইন্ডোর সময়ে সে আসবে বলে মনে হচ্ছে । তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় কম পাওয়া যেতে পারে। তবে ফুটবলের ভাষা একই। আশা করছি, দ্রুত মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না।’
নতুন বছরে মার্চে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে হামজা চৌধুরীর অভিষেকের সম্ভাবনা রয়েছে। সমর্থকরাও চাইছেন দ্রুত নতুন বছরে লাল সবুজ জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে ঝড় তুলুক এই মিডফিল্ড জেনারেল!