রাশিয়া রেকর্ড ২১ শতাংশে তার সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট উচ্চ ভোক্তা মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও সুদের হার আরও বৃদ্ধি থেকে বিরত রয়েছে রাশিয়া। মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
দেশটির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরদের সমালোচনার মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে। তারা বলেছেন, উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সামরিক ব্যয় ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য মূল্য স্থিতিশীল রাখার মধ্যে দেশটির অর্থনীতিতে যে টানাপড়েন চলছে, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তা আরও স্পষ্ট হলো।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা বলেছেন, অক্টোবরে সুদহার বৃদ্ধির কারণে ঋণ গ্রহণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও চাপের মুখে পড়েছে। তারা পরবর্তী বৈঠকে সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা উন্মুক্ত রেখেছে। তাদের প্রত্যাশা, বর্তমান নয় দশমিক পাঁচ শতাংশ মূল্যস্ফীতি আগামী বছর বার্ষিক ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
রাশিয়ার কারখানাগুলোতে এখন তিন শিফটে কাজ চলছে। সেখানে সামরিক বাহিনীর জন্য যানবাহন থেকে পোশাক তৈরি সবই চলছে। একদিকে শ্রমিক সংকটে মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য মানুষের অ্যাকাউন্টে আকর্ষণীয় বোনাস আকারে প্রচুর রুবল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে বাজারে দাম বেড়েই চলেছে।
এর পাশাপাশি, রুশ মুদ্রা রুবলের অবমূল্যায়ন হওয়ায় আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়ে চলেছে। ফলে রাশিয়ার এখনকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন থেকে আমদানিকৃত গাড়ি ও ভোক্তা ইলেকট্রনিক্সের মতো পণ্যের দাম বাড়ছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ব্যাহত হওয়ায় চীনের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
তেল রফতানির আয়ের মাধ্যমে নিজেদের সামরিক ব্যয় সামলাচ্ছে রাশিয়া। ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার পর রুশ তেলের গন্তব্য হয়ে গেছে ভারতের মতো নতুন ক্রেতারা। এদিকে, রুশ তেলের ওপর ব্যারেল প্রতি ৬০ মার্কিন ডলার মূল্যসীমার মতো নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে না ভারত ও চীন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উচ্চ সুদহার সাময়িকভাবে কাজ করলেও ব্যবসার জন্য ঋণ গ্রহণ ও বিনিয়োগকে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত এক মাসে অন্যান্য পন্থাও অনুসরণ করেছে, যেমন ব্যাংকের উপর আরও কঠোর ক্রেডিট মানদণ্ড ও নিয়ন্ত্রক শর্ত আরোপ করা।
এ বিষয়ে এক বিশ্লেষক বলেছেন, এই পন্থা সফল হয়েছে কি না তা আগামী বছর দেখা যাবে। তবে আপাতত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সুযোগ পেয়েছে, যা শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ ও প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও সন্তুষ্ট করেছে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার পরবর্তী নীতিগত বৈঠকের আয়োজন করবে।