আফ্রিকার দেশ সুদানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গ্লোবাল হাঙ্গার মনিটরের মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে দেশটির পাঁচটি স্থানে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে ও সামনের মে মাস নাগাদ আরও পাঁচ এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
আধুনিক সময়ের ভয়াবহতম খাদ্য সংকট নিরসনে যখন বাড়তি সহায়তা প্রয়োজন, তখন বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংঘর্ষে পরিস্থিতির ভয়াবহতা কেবল বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড ফেজ ক্লাসিফিকেশনের (আইপিসি) দুর্ভিক্ষ পর্যালোচনা পরিষদ জানিয়েছে, আল ফাশিরের উদ্বাস্তুদের জন্য নির্মিত আবু শোউক ও আল সালাম শিবিরে দুর্ভিক্ষের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া উত্তর দারফুরের রাজধানীসহ দক্ষিণ কোরদোফান অঙ্গরাজ্যের দুটি অঞ্চলেও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে গেছে। আগস্টে উত্তর দারফুরের জমজম শিবিরে দুর্ভিক্ষের প্রমাণ পেয়েছিলো তারা, যা এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি যাচাই ও নিশ্চিতে কাজ করে থাকে এই পরিষদ। সামনের দিনগুলোতে উত্তর দারফুরের আরও পাঁচটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পারতে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদের ধারণা, মে মাস নাগাদ উম কাদাদাহ, মেলিত, আল-ফাশির, তাওইশা ও আল লাইত এলাকায় ক্ষুধা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
সুদানের আরও ১৭টি এলাকা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে বলে চিহ্নিত করেছে তারা।
গত জুনে, আইপিসি ধারণা করেছিল, সামনের ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রায় দুই কোটি ১১ লাখ মানুষের ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সম্প্রতি তারা আশঙ্কা করছে, এই সংখ্যাটি আরও ৩৫ লাখ বৃদ্ধি পেতে পারে। সবমিলিয়ে সংখ্যাটি প্রায় দুই কোটি ৪৬ লাখে পৌঁছাতে পারে, যা সুদানের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
খাদ্যনিরাপত্তা ও সংকট বিশ্লেষণে আইপিসির কাজে প্রতিনিয়ত সুদান সরকারের ব্যাঘাত ঘটানোর পরও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তাদের বিশ্লেষণ থেকে ত্রাণ সহায়তা কাদের বেশি প্রয়োজন তা সহজে ধারণা করতে পারে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলো। সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার ঘোষণা করা হয়, গ্লোবাল হাঙ্গার মনিটরিং সিস্টেমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিন্ন করছে তারা, কারণ আইপিসির প্রতিবেদন বিশ্বাস অযোগ্য যা দেশটির সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে।
পশ্চিমা বিশ্বের অর্থায়নে স্বাধীনভাবে পরিচালিত একটি সংস্থা হচ্ছে আইপিসি। তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ১৯টি মানবিক সহায়তা প্রদানকারী বৃহৎ সংগঠন ও আন্তঃসরকার প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ ও নিরসন ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা খাদ্য সংকটের আগাম সতর্কতা প্রদান করে যেন সংগঠনগুলো দুর্ভিক্ষ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।