ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ও ইসরায়েল একে অপরকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বিলম্বিত করার জন্য দোষারোপ করেছে। উভয় পক্ষই সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আলোচনায় অগ্রগতির কথা জানালেও চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়নি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, দখলদার সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে নতুন শর্ত আরোপ করেছে, যা বিদ্যমান চুক্তিতে পৌঁছানোর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে।
সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা নমনীয়তার পরিচয় দিচ্ছে এবং কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় আলোচনা এগোচ্ছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনটি মিথ্যাচার করছে, আগেই পৌঁছানো সমঝোতাকে অস্বীকার করছে এবং আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করছে।
তবে তিনি যোগ করেছেন, ইসরায়েল তাদের নাগরিকদের মুক্ত করতে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
ইসরায়েলের মধ্যস্থতাকারীরা মঙ্গলবার কাতার থেকে দেশে ফিরে আলোচনা নিয়ে পরামর্শ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর সম্প্রতি কয়েক ধাপের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন করতে তাদের প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থান নিয়ে সমঝোতা এখনও আলোচনার অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, দক্ষিণ গাজায় সেনা কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ইসরায়েল গাজায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে, বাফার জোন ও নিরাপত্তা ফাঁড়ির মাধ্যমে।
হামাস যুদ্ধের অবসান চাইলেও ইসরায়েল বলছে, তারা প্রথমে গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ শেষ করতে চায়, যাতে ইসরায়েলি জনগণের জন্য আর কোনও হুমকি না থাকে।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরে তাদের চাপ বজায় রেখেছে। ১৪ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অন্যতম ধ্বংসাত্মক এই অভিযান চালানো হচ্ছে বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন ও জাবালিয়ার তিনটি হাসপাতালের আশপাশে।
ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করছে, ইসরায়েল উত্তর গাজাকে স্থায়ীভাবে জনশূন্য করতে চাচ্ছে। ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা বেসামরিকদের নিরাপত্তার জন্য ওই এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।
গাজায় বুধবার ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শেখ রাদওয়ানের উপশহরে একটি পরিত্যক্ত স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর ওপর হামলায় অনেকে হতাহত হন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজার আল-ফুরকান এলাকায় হামাসের এক যোদ্ধাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের মানবিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত আল-মাওয়াসি এলাকায় কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা ওই এলাকায় হামাসের আরেক সদস্যকে নিশানা করেছিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে আনা হয়। এই ঘটনার জেরেই যুদ্ধের সূচনা হয়। গাজায় হামাসবিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ২৩ লাখ মানুষের বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত এবং গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।