বুধবার, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
শিরোনাম:
Homeজাতীয়হত্যার প্রতিশোধ নিতেই কক্সবাজার এনে খুন করা হয় সেই কাউন্সিলরকে

হত্যার প্রতিশোধ নিতেই কক্সবাজার এনে খুন করা হয় সেই কাউন্সিলরকে

- Advertisement -spot_img

খুলনার পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদের হত্যার প্রতিশোধ নিতেই তার ভাতিজা শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পুর নেতৃত্বেই এক সংঘবদ্ধ চক্র কৌশলে কক্সবাজার এনে খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে হত্যা করা হয়।

পাপ্পু নিজেই গুলি করে এই হত্যার ঘটনা ঘটান। এছাড়া স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বও এই হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন রয়েছে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ৮ জানুয়ারি কক্সবাজারে আলোচিত টিপু হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  মঙ্গলবার (১৪ জানুুয়ারি) বিকালে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার কাপনা পাহাড়ি চা বাগান থেকে নারীসহ তিনকে গ্রেফতারের পর এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলেছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে টিপু হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭)। তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড দৌলতপুর দেওয়ানা মোল্লাপাড়া এলাকার জামাল শেখের পুত্র। অন্য দু’জন পাপ্পুর প্রতিবেশি মো. সেলিম আকনের মেয়ে ঋতু (২৪) এবং ৬নং ওয়ার্ডের কেশবলাল সড়কের মধ্য কারিগরপাড়ার হায়দার সরদার অদুদের পুত্র ও পাপ্পুর বন্ধু মো. গোলাম রসুল (২৫)। তিনজনকে কক্সবাজারে নিয়ে আসা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, ২০১৫ সালে খুন হন দৌলতপুরে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও পাটশ্রমিক ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ। এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন নিহত কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানি টিপু এবং হত্যা মামলার প্রধান আসামিও।

হুজি শহীদের ভাতিজা শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পুর স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, হুজি শহীদ ও নিহত টিপু একই এলাকার বাসিন্দা। সে কারণে তাদের মধ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব ছিলো। সে দ্বন্দ্বের জেরে গোলাম রাব্বানির নেতৃত্বে হুজি শহীদকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে হুজি শহীদের পরিবারের পরিকল্পনায় টিপুকে হত্যা করা হয়েছে।

যেভাবে হত্যা করা হয়:
হত্যার মিশন সম্পর্কে শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে জানান, গোলাম রাব্বানীকে টিপুকে হত্যা করার জন্য দীর্ঘদিন আগে পরিকল্পনা করেছেন পাপ্পু। এর অংশ হিসেবে গ্রেফতারকৃত নারী ঋতুকে টোপ হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করে। ঋতুর স্বামী ক্রসফায়ারে মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে গোলাম রাব্বানীর টিপুর সাথে ঋতুর সখ্যতা গড়ে উঠে। এই সুযোগটি গ্রহণ করে হুজি শহীদের ভাতিজা শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু। পূর্ব পরিকল্পনা মতো গোলাম রাব্বানী টিপুর অবস্থান কক্সবাজারে নিশ্চিত হয়ে তার সাথে সময় কাটাতে কক্সবাজারে আসার প্রস্তাব দেন ঋতু। সে মতে, ৭ জানুুয়ারি খুলনা থেকে ইমপেরিয়াল বাসে করে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয় পাপ্পু, তার বন্ধু গোলাম রসুল ও ঋতু। কক্সবাজারে পৌঁছে গোলাম রাব্বানি টিপুর সাথে যোগ দেন ঋতু। পাপ্পু ও গোলাম রসুল ওৎ পেতে থাকে। টিপুর সাথে আগে থেকেই ছিলেন ১৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালু।

হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে স্বাকারোক্তিতে পাপ্পু জানান, ঋতুর কাছ থেকে গোলাম রাব্বানির টিপুর অবস্থান সম্পর্কে সার্বক্ষণিক তথ্য নেন তারা দুই বন্ধু। ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর সৈকতের সুগন্ধা এলাকার হোটেল সী-গালের সামনে গোলাম রাব্বানি অবস্থান নিলে ঋতুর দেয়া তথ্য মতো সেখানে যান পাপ্পু ও তার বন্ধু গোলাম রসুল। সী-গালের সামনে ফুটপাতে হাঁটা অবস্থায় টিপুকে মাথায় গুলি করেন পাপ্পুই। তারা মোটরসাইকেলে করে গিয়ে গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পুলিশ সুপার জানান, টিপু হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি গ্রেফতার তিনজের কাছ থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে খোসাটি উদ্ধার হয়। সে আগ্নেয়াস্ত্রটি কোথা এসে বা কারা সরবরাহ করেছে তার এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এই হত্যাকান্ড ঘটাতে ওই তিনজন কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা নিয়েছে- এমন তথ্যও নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। স্থানীয় কে বা কারা সহযোগি ছিলো এবং কি রকম সহযোগিতা করেছে সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করছে পুলিশ।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ সংবাদ
- Advertisement -spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here