সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
শিরোনাম:
Homeজাতীয়বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ নড়াইলের সোহান গুলিবিদ্ধ হাত গুলি নিয়ে কাতরাচ্ছেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ নড়াইলের সোহান গুলিবিদ্ধ হাত গুলি নিয়ে কাতরাচ্ছেন

- Advertisement -spot_img
নড়াইল প্রতিনিধি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলিতে আহত হন সোহান বিশ্বাস (২৮)। গুলিবিদ্ধ বাম হাতের যন্ত্রণায় ঘুম আসে না সোহান বিশ্বাসের । গুলিতে তাঁর বাম হাতের নার্ভ মারাতকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বাম হাতের স্বাভাবিকতা কিংবা সচলতা ফেরাতে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করেছেন। কিন্তু সেটি এখনো স্বাভাবিক হয়নি এবং তাঁর শরীরে অসংখ্য গুলি রয়েছে। সব সময় তাঁর শরীরে যন্ত্রণা করে। ফলে অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারায় ধীরে ধীরে হাতটি অচল হওয়ার পথে।
গুলিবিদ্ধ সোহান বিশ্বাস নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগাম ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ছেলে। সংসারে অভাব থাকায় ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত গিয়ে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। আয়ের একমাত্র ভরসা পিতা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে আছেন। যে কারণে ৬ ভাই বোনের মধ্যে কনিষ্ঠ সন্তানকে পরিবারকে সহযোগিতা করতে প্রথমে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ নিয়েছিলেন। এরপর দাম্পত্য জীবনে এক সন্তানের জনক যুবক সোহান বিশ্বাসের রাজমিস্ত্রি কাজের সামান্য আয়ে চলে তাঁদের টানাটানির সংসার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সেই আয়ের পথও এখন বন্ধ। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল। আহতদের তালিকায় ১১ হাজার ৫৫১ জনের মধ্যে সোহান বিশ্বাসের নাম ৮ হাজার ৩৪২ নম্বর ক্রমিকে প্রকাশ করা হয়েছে।
আন্দোলনের দিনগুলো স্মরণ করে সোহান বিশ্বাস জানান,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। এরপর রংপুরসহ দেশব্যাপী আন্দোলন আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় সোহান আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৪ আগস্ট নড়াইলের মাদ্রাসা বাজার হতে মিছিলে অংশ নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে পৌর শহরের দিকে ধাবিত হন। আন্দোলন চলাকালে দুপুর দেড়টার দিকে মিছিলটি মাদ্রাসা বাজারের পশ্চিম পাশে ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছলে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ পুলিশ ছররা গুলি ছুড়তে থাকে। তিনি সামনে ছিলেন। এতে সোহান বুকের বাম পাশে, বাম হাত, পেটে ও পায়ে দুই শতাধিক গুলি লাগে। বিশেষ করে বুকের বাম পাশে এবং পুরো বাম হাত জুড়ে এমন কোনো জায়গা নেই যে তাঁর গুলি লাগেনি। গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তার মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। সেখানে থাকা অন্য আন্দোলনকারীরা অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে ভর্তি করলে অবস্থার গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। মারাত্বকভাবে গুলিবিদ্ধ বাম হাতে একবার অস্ত্রোপচার করা হলেও সচল করা সম্ভব হয়নি। গুলি বের করতে হলে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। পরিবার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছে তাঁর চিকিৎসার। সে জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ১০-১২ লাখ টাকা। কিন্তু সেই টাকা জোগান দেওয়া সম্ভব নয় দিন মজুর পরিবারের। বর্তমানে সোহানের বুকের বাম পাশ,বাম হাত ও পেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রায় দুই শতাধিকটি গুলি রয়েছে। সোহানের বাঁ হাতের নার্ভ এবং রক্তনালিতে গুলি থাকায় হাতটি অকেজো হওয়ার পথে উল্লেখ করে তাঁর চাচা নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বিশ্বাস বলেন,‘‘সব শেষে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে। ওর উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০-১২ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ পর্যন্ত ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু কোথাও  থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাইনি। শুধুমাত্র ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের একটি সংগঠন মাত্র ১০ হাজার টাকার সামান্য কিছু সহযোগিতা দিয়েছেন। কিন্তু তা দিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব না। তাই সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে ভাতিজার হাতটি ভালো হয়ে যেতে পারে। তা না হলে হয়তো চিরদিনের মতো অকেজো হয়ে যাবে।’
আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন,‘দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে যাঁদের রক্ত ঝরেছে, তাঁদেরই একজন আমার ভাতিজা সোহানের খোঁজ কেউ রাখেনি। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে ছেলেটির জীবনই এখন সংকটে।’
‘প্রতিদিনই ছাত্রদের আন্দোলন দেখতাম। চোখের সামনে এসব দেখে আর ঠিক থাকতে পারিনি। মনের টানে আন্দোলনে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ হই। শরীরে দুই শতাধিক ছররা গুলি রয়েছে। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। একবার সহায়-সম্বল সবকিছু বিক্রি করে বাম হাতের অস্ত্রোপচার করেও অবশতা কাটেনি। বলা চলে বাম হাতটি এখন অচল। আরো অস্ত্রোপচারসহ উন্নত চিকিৎসা করা দরকার। তবুও খোঁজ নেয় না কেউ। তিনি অনুদান নয়, উন্নত চিকিৎসা চান।’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন গুলিবিদ্ধ সোহান বিশ্বাস।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নড়াইল জেলা সমম্বয়ক (ছাত্র প্রতিনিধি) রাফায়েতুল হক তমাল জানান,‘ আমরা শুধুমাত্র জেলায় আহতদের তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল। তালিকা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সবাই জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা পাবেন।’ ###
- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ সংবাদ
- Advertisement -spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here