অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিক দলের পেছনে লাগার দরকার নাই, আপনারা আপনাদের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের পেছনে লাগুন। তাদের প্রশাসন এবং আপনাদের আশপাশ থেকে সরিয়ে দিন।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে জেটেব আয়োজিত ‘বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা: প্রেক্ষিত টেক্সটাইল সেক্টর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আপনারা (সরকার) মানুষের অধিকার দ্রুততার সঙ্গে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলেই মানুষ আপনাদের সাধুবাদ জানাবে। ইতিহাস আপনাদের ধারণ করবে। তিনি বলেন, লক্ষণ সেনকেও যেমন ইতিহাস ধারণ করে নাই, পতিত স্বৈরাচারের পলায়ন হয়েছে। যতই হম্বিতম্বি করুক, হিটলারও ফেরত আসেনি, তার বংশধররাও ফিরে আসেনি। লক্ষণ সেনের গোষ্ঠীরও কেউ ফিরে আসেনি। পতিত স্বৈরাচারেরও বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা নাই।
বিএনপি ক্ষমতায় যাবার জন্য রাজনীতি করে না উল্লেখ করে তিনি বলন, আমরা বলি না তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য বিএনপি রাজনীতি করে। বিএনপি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করে। কাজেই আজ অনেকে বলার চেষ্টা করেন—আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল এইটা, ওইটা। আমরা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল জনগণের অধিকার আদায় করা। সেটিই হচ্ছে বিএনপির দাবি। সেজন্যই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ভাইয়েরা আন্দোলন করেছেন, আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের স্মরণ করি। শহীদ আবু সাইদ, মুগ্ধসহ দুই হাজারের মতো ছাত্র-জনতা, শিশু, আমার ভাই বোনেরা শহীদ হয়েছেন। বিএনপিরও ৪২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আজকে ঐক্যের প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ হলেই দেশ এগিয়ে যাবে।
ভারতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের ভাইয়েরা… সোশ্যাল মিডিয়া ও কোনও কোনও টেলিভিশনে তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। তারা (বিগত সরকার) লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করেছে। আপনাকে, আমাকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অস্ত্র লুটপাট করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে তাদের লাখ লাখ দলীয় কর্মী নিয়োগ দিয়ে দলীয় বাহিনীতে রূপান্তরিত করেছিল।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দেশবাসী, পৃথিবীর মানুষের আস্থা আছে। সরকারকে সহযোগিতা করছে দেশের মানুষ একদম নিঃশর্তভাবে। কাজেই তাদের (সরকার) সিদ্ধান্ত হতে হবে আরও বলিষ্ঠ, আরও দ্রুততার সঙ্গে। তা না হলে স্বৈরাচারের দোসররা—যারা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে আছে, তারা কিন্তু ফণা তোলার জন্য, আপনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য চেষ্টা করছে, করবে, করতেই থাকবে। তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে আইডেন্টিফাই করুন।
তিনি বলেন, আজকে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রক্তের শপথ নিয়ে বন্ধুদের মনে রাখতে হবে, ঐক্যে ভাঙনের চেষ্টা করবেন না। জাতি ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই স্বৈরাচার পালিয়েছে। জাতি যদি তার ঐক্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হতো তাহলে আমরা সবাই ব্যর্থ হতাম। ঐক্য ধরে রাখতে হবে। তার জন্য যেটা প্রয়োজন, কমন শত্রু আইডেন্টিফাই করুন এবং দ্রুততার সঙ্গে জনগণকে তার অধিকার আদায়ের সুযোগ দিন। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কোন পথে যাবে, কাদের ধারণ করবে এবং আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আজকে অনেক ন্যারেটিভস, অনেক কথা শুনি। সব কথা শুনবো, চিন্তা করবো তারপরে কমেন্টস করবো—তাহলে ভুল কম হবে। আর যদি আপনি না-ই শোনেন, চিন্তা না করেন, তাহলে ভুল হয়ে যাবে। কাজেই আমরা যখন শুনি ৫৩ বছরে সংস্কার হয়নি, তখন আমাদের মনে কষ্ট লাগে। কারণ যিনি বলেন তার বয়স ৫৩ হয়নি। বাংলাদেশের সংস্কারের যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া তিনি জানেন না, অথবা স্বীকার করতে চাননি অথবা বুঝতে পারেননি।
জেটেব সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এ.বি.এম. রুহুল আমীন আকন্দ। বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।