মঙ্গলবার, অক্টোবর ৮, ২০২৪
শিরোনামঃ
||নড়াইলে হরিলীলামৃত স্কু্লের শিক্ষকদের মাঝে সম্মানী প্রদান ও আলোচনা সভা||মধ্যরাতে হোটেলে রুমের কড়া নাড়তেন এক অভিনেতা: মল্লিকা||আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন: জামায়াতের আমির||নড়াইল সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা||শৈলকুপা সিটি কলেজের শিক্ষকদের পরিচিতি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত||বিশ্ব শিক্ষক দিবসে দি নড়াইল এডুকেশন সোসাইটি গুণী শিক্ষক সম্মাননা||শিক্ষার মান উন্নত করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে: শারমিন আক্তার||ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে প্রাণ গেল ৩৪ জনের||সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র ৭ দিনের রিমান্ডে||নড়াইলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যুবকের মৃত্যু||আবার মা হচ্ছেন কোয়েল মল্লিক||দল বা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে আর বিভক্ত নয়: ডা. শফিকুর রহমান||তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বিয়ে করলেন রশিদ খান||ইরানের তেল খনিতে হামলা নিয়ে আলোচনা চলছে: বাইডেন||গুচ্ছের চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষা শনিবার থেকে, ক্লাস শুরু ২০ অক্টোবর
Homeজাতীয়মুখোশ পরা পিটার হাসের মানবতাবিরোধী গণতান্ত্রিক ব্যবসা

মুখোশ পরা পিটার হাসের মানবতাবিরোধী গণতান্ত্রিক ব্যবসা

ডেস্ক রিপোর্ট

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের লেখা একটি কলাম ছাপা হয়েছে সম্প্রতি দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে। ইংরেজিতে ‘দি ইউএস স্টিল কেয়ারস ডিপলি অ্যাবাউট ডেমোক্রেসি’ এবং বাংলায় ‘বাংলাদেশের সামনে যে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই কলামে পিটার হাস গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকারসহ বাংলাদেশের নানা অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।

সুশীল শব্দমালায় এই কলামে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলা হলেও পিটার হাসের বক্তব্যে থাকা প্রচ্ছন্ন স্ববিরোধিতা ও আত্মপ্রবঞ্চনাও নজর এড়ায়নি অনেকের। পাশাপাশি দেশের সুশীল সমাজ, সংবাদমাধ্যমের অধিকার ও শ্রমিক অধিকার রক্ষার আড়ালে তিনি নিজের যে মতামত চাপিয়ে দিতে চাইছেন, তার কতটা তার কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমানার মধ্যে পড়ে- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

মূলত সম্প্রতি হয়ে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকেই দেশের অভ্যন্তরীণ নানা ইস্যুতে বারবারই হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন পিটার হাস। আর এ কাজে তাকে উপযুক্ত রসদ যুগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত সুশীল সমাজ নামধারী এক শ্রেণির অতি উৎসাহী ব্যক্তিবর্গ। যদিও পিটার হাস ও অতি উৎসাহী দেশীয় সহযোগীদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা স্বত্ত্বেও সবশেষ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়। তবে এখনও যে থেমে নেই তাদের কর্মকাণ্ড, তারই একটা উদাহরণ পিটার হাসের এই কলাম বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বারবারই পিটার হাসের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ও ওয়াশিংটনে বসে থাকা তার নীতি নির্ধারকদের সুদৃষ্টি আকর্ষণের আকাঙ্ক্ষাও জড়িত বলে মনে করছেন তারা।

এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মূলত পিটার হাস দেখাতে চান তিনি এখনও সক্রিয় রয়েছেন। নির্বাচনের পরও বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের ওপর তিনি প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন। তিনি যতদিন বাংলাদেশে থাকবেন ততদিন তিনি এসব করতেই থাকবেন। এর সঙ্গে তার ক্যারিয়ারের উন্নতির বিষয়টিও জড়িত।

পিটার হাসের কলামে উঠে এসেছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অঙ্গীকারের বিষয়টি। কিন্তু গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের রেকর্ড কী তার বিবরণ লিখিত হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। সবশেষ ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বর গণহত্যায় মদদ দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের একজন রাষ্ট্রদূত যখন বাংলাদেশকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সবক দেয়ার চেষ্টা করেন, তা কতটা দ্বিমুখিতা এবং আত্মপ্রতারণা হতে পারে তা বলাই বাহুল্য।

গাজায় গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যায় নিহত হয়েছেন ৩১ হাজার ফিলিস্তিনি। যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুক্তরাষ্ট্র শুধু এই গণহত্যা নীরবে দেখেইনি, বরং শত শত টন বোমা ও সর্বাধুনিক অস্ত্র দিয়ে ইসরাযইলকে এই গণহত্যা চালিয়ে যেতে মদদ দিয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেয়া প্রতিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিটি পদক্ষেপে বাধার দেয়াল তুলে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলের গণহত্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান এতটাই নির্লজ্জ যে, তা দেশটির অতীতের সব কুখ্যাতির রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। ফিলিস্তিনে অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৯৫ জন সাংবাদিক। আহত, নিখোঁজ ও গ্রেফতার হয়েছেন বহু সাংবাদিক। শুধু তাই নয়; সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদেরও টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে, বোমা ফেলা হচ্ছে তাদের বাড়িঘরে। গাজায় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর চলমান ইতিহাসের নির্মমতম এই দমন-পীড়নেও যথারীতি নিশ্চুপ যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু সাংবাদিকরাই নয়; গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা চলছে সাহায্যকর্মীদের ওপরও। এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচির অন্তত দেড়শ কর্মী। যা জাতিসংঘের ইতিহাসে নজিরবিহীন হিসেবে দাবি করেছেন খোদ জাতিসংঘ মহাসচিবই। জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মীদের মানবাধিকারের প্রশ্নেও এখানে নিশ্চুপ যুক্তরাষ্ট্র।

এমনকি পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকালেও প্রতিফলিত হয় গণতন্ত্র প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত অবস্থানের বিষয়টি। সেখানে দেশটির নির্বাচিত রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ এর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে সামরিক বাহিনীর মদদপুষ্ট কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানকে রাখা হয়েছে কারাগারে। আর এসবের জন্য ইমরান খান সরাসরি দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রকে। যুক্তরাষ্ট্রই তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কলকাঠি নেড়েছে বলে দাবি করেন ইমরান খান। পরবর্তীতে পাকিস্তানের সম্প্রতি হয়ে যাওয়া নির্বাচনে দেশটির ইতিহাসের স্মরণকালের নজিরবিহীন ভোট কারচুপি হওয়া স্বত্ত্বেও এসব ব্যাপারে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

এই যখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রকৃত চিত্র, তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিটার হাসের কলামে বাংলাদেশকে দেয়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সবক কতটা যুক্তিযুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা।

এ ব্যাপারে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের যে ন্যক্কারজনক অবস্থান সেখানে তো যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যাপারে কিছু বলার অবকাশ আছে কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে পিটার হাস তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি উল্লেখ করে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পিটার হাস তার মেয়াদকালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নে তো ভূমিকা রাখতে পারেনইনি বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সেই অবস্থায় তিনি এখন নির্বাচনের পর দেখাতে চাইছেন যে এখনও এ দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে তার সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। তিনি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে চাচ্ছেন, একই সঙ্গে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য তিনি কাজ করছেন। আর এই উদ্দেশ্যেই লেখালেখিসহ বিভিন্ন ফোরামে কথা বলছেন তিনি।

পত্রিকায় প্রকাশ হওয়া তার কলামে হাস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশ নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী সে বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া উল্লেখ করেছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কথা। এগুলোর মধ্যে দিয়ে কোনো প্রচ্ছন্ন হুমকির বার্তা দেয়া হচ্ছে কি না এ ব্যাপারে ড. ইমতিয়াজ বলেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভয় বাংলাদেশ যেন চীনের দিকে খুব বেশি ঝুঁকে না যায়, তা ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি তো রয়েছেই।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মতামত কলামে পিটার হাসের বক্তব্য প্রসঙ্গে ড. ইমতিয়াজ বলেন, মূলত রোহিঙ্গা সংকটকে ইস্যু করে মিয়ানমারের আরও ভেতরে ঢুকতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সে জন্য তারা ভর করতে চায় বাংলাদেশের ওপর। ঠিক যেভাবে তারা আফগানিস্তানে ঢোকার জন্য পাকিস্তানের ওপর ভর করেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ তা মানবে কেন, পাশাপাশি ভারতের জন্যও তা স্বস্তিকর হবে না।

এছাড়া বাংলাদেশের বেশ কিছু অর্থনৈতিক বিষয়কেও প্রভাবিত করতে চাইছেন পিটার হাস, যার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সাফল্য প্রমাণের ব্যাপার রয়েছে বলেও মনে করছেন ড. ইমতিয়াজ।

তিনি বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে এয়ারবাসের দিক থেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি। এক্ষেত্রে বোয়িংয়ের পক্ষে ভূমিকা রাখতে পিটার হাসের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের চাপ রয়েছে। বাংলাদেশে তার অবস্থানকালীন সফলতা তো তাকে তুলে ধরতে হবে ওয়াশিংটনের সামনে। সেটার ওপরই তো নির্ভর করছে তার পরবর্তী পদোন্নতি এবং সুবিধাপ্রাপ্তি। এজন্য তিনি বাংলাদেশের এয়ারক্রাফট কেনাকাটার মতো ঢাকার সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করতে চাইছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সুবিধা করে দেয়ার প্রচেষ্টাও তিনি করছেন। এছাড়া মিয়ানমারের ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের ঢোকার ব্যাপারেও যদি তিনি নিজের ভূমিকা দেখাতে পারেন, তবে ওয়াশিংটনের নীতি নির্ধারকদের কাছে তিনি এগুলোকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরবেন। যা তার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের সহায়ক হবে।

পাশাপাশি দেশীয় এক শ্রেণির সুবিধাবাদী ব্যক্তির কারণেও পিটার হাস বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন বলেও মনে করেন ড. ইমতিয়াজ।

তিনি বলেন, ‘দেশের নাগরিক সমাজেরও একটি শ্রেণি অতি উৎসাহী হয়ে প্রকারান্তরে পিটার হাসকে আশকারা দিচ্ছেন। তাদের অধিকাংশেরই ছেলেমেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে থাকে। তাদের নিজেদেরও অনেকেরই দ্বৈত্ব নাগরিকত্ব রয়েছে। এই দেশীয় অতি উৎসাহী মহলও ওয়াশিংটনকে দেখাতে চায়, নির্বাচন পার হলেও তারা বসে নেই, তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে সক্রিয় রয়েছে।’

Stay Connected
16,985FansLike
2,458FollowersFollow
61,453SubscribersSubscribe
সর্বশেষ খবর
আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here