পারেরটং। শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গ্রামটি নিরাপদ সবজি গ্রাম হিসেবে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। একে অনেকে ‘করলা গ্রাম’ বলেও ডেকে থাকেন। ইতোমধ্যে এই গ্রামের সবজি কৃষকরা সবজি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। প্রতিদিন এ সবজি গ্রাম থেকে এখন উত্তোলন হচ্ছে ১২-১৩ টন করলা।
শুধু করলা নয়। সারাবছর কোন না কোন সবজি উৎপাদন হচ্ছে এ গ্রামে। এরমধ্যে রয়েছে-চালকুমড়া, শসা, আলু, ঝিংগা, চিচিঙ্গা, লাউ, বরবটি প্রভৃতি। এছাড়াও মাচার নীচে চাষ হয় ধনিয়া, ডাটা, লালশাক, ঢেড়স প্রভৃতি।
কৃষকরা জানান, এ গ্রামের উৎপাদিত সব সবজি নিরাপদ। অর্থাৎ বিষমুক্ত। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী তারা রোগ-বালাই, পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করেন সেক্স ফেরোমেন, হলুদ ট্যাপ, জৈবিক বালাইনাশক।
কৃষি অফিস সুত্র জানান, পারেরটং গ্রামে ৪০ হেক্টর বা ৩০০ বিঘা জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। সবজি চাষ করে এ গ্রামের প্রায় সব চাষী স্বাবলম্বি হয়েছেন। এছাড়াও এ গ্রামের পুরুষ- মহিলা মিলে মোট ৩০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
পারেরটং গ্রামের সবজি চাষী নাজমুল হাসান জানান, তিনি এবার ৬০ শতক জমিতে করলা চাষ করেছেন ৪ মাস আগে। প্রতি বিঘা করলা চাষে সার, বীজ, বাঁশ, মাচা, সুতা ইত্যাদিতে তার খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। তিনি প্রায় দেড়লাখ টাকার করলা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, এ গ্রামে প্রায় ২০০ জন করলা চাষী রয়েছেন। সবাই করলা চাষ ও বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হয়েছেন। নাজমুল হাসান জানান, প্রতিদিন পারের টং কালেকশন পয়েন্টে প্রায় ৫/৬ লাখ টাকার করলা বিক্রি হয়ে থাকে।
পারেরটং গ্রামের দায়িত্বে থাকা শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান জানান, পারেরটং গ্রামের সবজি উৎপাদনের বিষয়টি মাথায় রেখে এখানে ২০১৯ সালে একটি কালেকশান পয়েন্ট গড়ে তোলা হয়। প্রতিদিন চাষীরা তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি এই কালেকশান পয়েণ্টে নিয়ে আসেন। এখান থেকে পাইকাররা সবজি কিনে গাড়ি লোড করে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যান। তিনি জানান, এ গ্রামে প্রায় ২০০ জন সবজী চাষী রয়েছেন এবং ৩০০ বিঘা জানতে করলা চাষ হচ্ছে। আমরা আদের পরামর্শ, জাত নির্বাচন, পোকামাকড় দমনে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন জানান, পারেরটং কালেকশান পয়েন্টে প্রতিদিন করলা কৃষকরা নিয়ে আসেন। প্রতিদিন ১২-১৩ টন করলা বাগানগুলো থেকে উত্তোলন করা হয়ে থাকে। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ গ্রাম থেকে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার করলা বিক্রি হবার বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও মৌসুম অনুযায়ী সারা বছরই বিভিন্ন জাতের সবজি প্রতিদিন এই কালেকশান পয়েন্টে আসে। এখান থেকে পাইকাররা সবজি কিনে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন স্থানে।