রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Homeবিনোদনর‌্যাব-পুলিশের ‘টহল দুর্বলতায়’ বাড়ছে অপরাধ

র‌্যাব-পুলিশের ‘টহল দুর্বলতায়’ বাড়ছে অপরাধ

- Advertisement -spot_img

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি-ছিনতাইসহ প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। বিশেষ করে ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাজধানীর অপরাধ চিত্র। বিগত সময়ের তুলনায় রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইানশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কমে আসায় আগের তুলনায় অপরাধীরা বেশি সক্রিয় হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ প্রধান ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যেও উঠে এসেছে এমন কথা।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ‘ওয়েলকাম’ পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের হামলায় ওই বাসের চার যাত্রী গুরুতর আহত হন। এর আগের দিন ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালি ব্যাংকে দুই কিশোরসহ তিন জন ডাকাতির চেষ্টা করে। খেলনা পিস্তল দিয়ে ব্যাংকের ম্যানেজারসহ ১৬ জনকে প্রায় চার ঘণ্টা জিম্মি করে রাখে তারা। এছাড়া ১৮ ডিসেম্বর রাতের ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কে ফারজানা আক্তার নামে এক নারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এর দুদিন আগে ১৬ ডিসেম্বর রাতে আসাদগেট এলাকায় দেশীয় অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে ছিনতাই করে কয়েকজন— এমন দৃশ্যের কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। গত বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে সায়েদাবাদে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. কামরুল হাসান (২৩) নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর রাতে মগবাজারে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মারা যান হাবিবুল্লাহ (১৮) নামে এক কিশোর। হরহামেশাই ঘটছে এমন ঘটনা। প্রকাশ্যে এমন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বল চেকপোস্ট এবং টহল কার্যক্রমকেই দায়ী করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও নগরবাসী।

রাজধানীসহ সারা দেশে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির মতো প্রকাশ্যে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি পুলিশের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাতেও উঠে আসে। এ নিয়ে উদ্ধেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও। গত সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কার্যক্রম বাড়িয়ে ছিনতাই শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশনা দেন তিনি। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, ‘শেষ রাতের দিকে সাধারণত ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি হচ্ছে। আমরা পুলিশকে ইন্সট্রাকশন দিয়েছি— শেষ রাতে যেন প্যাট্রলিং বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের টহল বাড়িয়ে ছিনতাই যাতে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে।’

দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকাতি-ছিনতাইসহ প্রকাশ্যের সংঘটিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এবং পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে পুলিশের টহল ও চেকপোস্ট সংক্রান্ত কার্যক্রমের দুর্বলতায় অপরাধীরা বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিনিয়ত চেকপোস্ট ও টহল বাড়াতে হবে। কেননা, চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতেও চাপ বাড়ছে। দেশকে স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাখা জরুরি।’

এদিকে পুলিশের প্রায় ছয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণ দেখা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছরই ছিনতাই বেড়ে চলেছে। ২০১৯ সাল থেকে গত আগস্ট (২০২৪) পর্যন্ত ছিনতােইয়ের ঘটনায় ৪৭ হাজারের বেশি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে অভিযোগ ছিল ৬ হাজার ৮৮০টি, ২০২০ সালে ৭ হাজার ২০০, ২০২১ সালে ৮ হাজার ৪৯৮, ২০২২ সালে ৯ হাজার ৫৯১, ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৪৭৫ এবং চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৮৩টি ঘটনা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জ এলাকায় ১৫ হাজার ৪১৯টি অভিযোগ রয়েছে। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জে ৭ হাজার ৭৪৬টি। তবে বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ছিনতাইয়ের শিকার অনেকেই ‘ঝামেলা এড়াতে’ আইনি প্রক্রিয়াতেও যেতে চান না। সেই হিসাবে ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ তথ্য বলছে, গত ১১ মাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২০৮টি, চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৩৭টি এবং খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫১৪টি। অভিযোগ রয়েছে, চুরি ও ছিনতাইয়ের বেশিরভাগ ঘটনার মামলা নেয় না পুলিশ। ফলে প্রকৃত অপরাধের চিত্র আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। র‌্যাবের প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নে সংশ্লিষ্ট এলাকার অপরাধপ্রবণ জায়গাগুলো নির্ধারণ করা হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় কোন সময়ে চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ বেশি হচ্ছে— সে অনুযায়ী টহল কার্যক্রমসহ চেকপোস্ট বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যরাত এবং ভোরে বাসসহ বিভিন্ন টার্মিনালে যখন যাত্রীরা নামেন, তখন ওইসব এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমরা ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট ডাটাবেজ তৈরি করছি। কারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, অপরাধীদের নেপথ্যে কারা জড়িত এবং নতুন করে কেউ জড়িয়ে পড়ছে কিনা, সেসব বিষয় যাচাই করা হচ্ছে। একইসঙ্গে অন্যান্য মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের ঘটনায় পুলিশের যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জনসাধারণকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে মোটরসাইকেলের মাধ্যমে মোবাইল টিম বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া অপরাধ-প্রবণ এলাকায় এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ সংবাদ
- Advertisement -spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here