রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
শিরোনাম:
Homeঅর্থনীতিসিএমএসএমই খাতে স্বল্প সুদের পুনঃঅর্থায়ন স্কিম নড়াইলে কৃষি ব্যাংকের সাবেক আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকের...

সিএমএসএমই খাতে স্বল্প সুদের পুনঃঅর্থায়ন স্কিম নড়াইলে কৃষি ব্যাংকের সাবেক আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

- Advertisement -spot_img
নড়াইল প্রতিনিধি
কুটির,মাইক্রো,ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা দেখিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে মেয়াদী ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ‘‘নিউ সোনার গাঁ হোটেল’ নামক একটি অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সুদে ৫০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) নড়াইল শাখা। আর এই অনিয়মের সঙ্গে সরাসরি বিকেবি নড়াইল অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (আরএম) প্রতাপ কুমার বিশ^াস জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সুদে বিনিয়োগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সিএমএসএমই খাতে নিয়োজিত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা। ঋণ বিতরণে ব্যাংকিং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাঠ পর্যায়ের মূল্যায়নকারী এবং সুপারিশকারী কর্মকর্তার প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে ঋণ মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে নিউ সোনার গাঁ হোটেলকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ আরএম প্রতাপ বিশ^াসের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সেলিম হোসেন মোল্যা নামের একজন ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে,২০২২ সালের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত একটি সার্কুলার অনুযায়ী সিএমএসএমই খাতে নিয়োজিত উদ্যোক্তাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সুদে, মুনাফায় ও সহজ শর্তে ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করে। স্কিমটি ‘সিএমএসএমই খাতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’নামে অভিহিত। প্রকৃতপক্ষে, সিএমএসএমই খাতের নারী উদ্যোক্তা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন উদ্যোক্তা এবং যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিংবা কোভিড-১৯ এর ন্যায় অতিমারি ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবেন। আর এ স্কিমের আওতায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক পর্যায়ে আরোপিত বার্ষিক সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। কিন্তু বিকেবি নড়াইলের সাবেক আরএম প্রতাপ কুমার বিশ^াস ব্যাংকিং আইন ও নীতিমালা সরাসরি অমান্য করে মাঠ পর্যায়ের ঋণ মূল্যায়নকারী এবং সুপারিশকারী কর্মকর্তার সুপারিশকে উপেক্ষা করে নিউ সোনার গাঁ হোটেলের নামে ৫০ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে মেয়াদী ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ২০ লাখ টাকা স্বল্প সুদে বিতরণের মাধ্যমে চরম অনিয়ম করেছেন। এতে সাবেক আরএম প্রতাপ কুমার বিশ্বাস নিজে লাভবান হলেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
অভিযোগে আরও জানা যায়,গত ১৫ এপ্রিল নিউ সোনার গাঁ হোটেলের প্রোপাইটর মো.মফিজুর রহমান এবং শাহনাজ পারভীন পলির যৌথ আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৬ মে পূর্বের ভোগকৃত ২০ লাখ টাকা হতে ৩০ লাখ টাকা চলতি মূলধন (সিসি) আকারে এবং মেয়াদি আকারে ২০ লাখ টাকা সর্বমোট ৫০ লাখ টাকা শতকরা ১৩.৫৫ টাকা হার সুদে নবায়ন-বর্ধিতকরণের জন্য ফাইল প্রস্তুত করে মূল্যায়নকারী কর্মকর্তার সুপারিশ মোতাবেক নড়াইল শাখার ব্যবস্থাপক জি.এম.কামরুল হাসান ঋণ মঞ্জুরের সুপারিশ করে ঋণ নথি নড়াইলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক বরাবর প্রেরণ করেন। এক্ষেত্রে নিউ সোনার গাঁ হোটেলের উদ্যোক্তাগণ তাদের আবেদনপত্রে,ঋণ প্রস্তাবপত্রে ও মূল্যায়ন প্রতিবেদনে মূল্যায়নকারী কর্মকর্তা ও ঋণ মঞ্জুরের সুপারিশকারী কর্মকর্তা কোন পর্যায়ের কেউই সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তা হিসেবে মেয়াদী ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের বিষয়টির লিখিত কোন প্রস্তাব করেননি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রতাপ কুমার বিশ্বাস ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে নিউ সোনার গাঁ হোটেলের উদ্যোক্তা মো.মফিজুর রহমানের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে মোটা অঙ্কের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এবং ঋণ প্রদানের নিয়মাচার ভেঙে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের ঋণ মঞ্জুর কর্তৃপক্ষের যোজসাজশেই সিএমএসএমই খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় শতকরা ৭ টাকা হারে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করেছেন।
গত ১২ জুন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক,খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় কর্তৃক মঞ্জুরীপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে নিউ সোনার গাঁ হোটেলের অনুকূলে খাবার হোটেল ব্যবসা পরিচালনার জন্য সিএমএসএমই খাতে ভোগরত চলতি মূলধন ঋণ ২০ লাখ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা বর্ধিতকরণ নবায়ন মঞ্জুরী এবং সিএমএসএমই খাতে মেয়াদী ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ২০ লাখ টাকা শতকরা ৭ হার সুদে ৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৫ বছরে ৫৭টি সমমাসিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে সর্বমোট ৫০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করে নড়াইল শাখায় পাঠায়। এই মঞ্জুরীপত্র দেখে ঋণ মঞ্জুরের সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ হতবাক হয়ে যান। কারণ সুপারিশকারী কর্মকর্তা যেহেতু নিউ সোনার গাঁ হোটেলের ঋণ প্রস্তাবের কোথাও সিএমএসএমই খাতে মেয়াদী ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ২০ লাখ টাকা ৭ শতাংশ হার সুদে ঋণ বিতরণের সুপারিশ করা হয়নি। এছাড়া পূর্ব থেকেই নিউ সোনার গাঁ হোটেল অযোগ্য বিবেচিত এবং খেলাপি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এমনকি অর্থাভাবে বেশ কিছুদিন খাবার হোটেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিল। অথচ এমন একটি অযোগ্য প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে,এখানে প্রতাপ কুমার বিশ্বাস অনিয়মের মাধ্যমে ম্যানেজ ফর্মুলায় নিউ সোনার গাঁ হোটেল নামক একটি অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় স্বল্প সুদের ঋণ সুবিধা দিয়ে নিজে অনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন। সর্বশেষ ঋণের হিসাব বিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঋণপত্রে মেয়াদী ঋণের বিপরীতে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্তারোপ থাকলেও অদ্যাবধী একটি কিস্তিও সময়মতো পরিশোধ করতে পারেনি নিউ সোনার গাঁ হোটেলের উদ্যোক্তারা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদি এ ঋণের স্থিতির পরিমাণ ২০ লাখ ৩৫ হাজার ৩৮৯ টাকা। আবার একই মঞ্জুরীপত্রে সিএমএসএমই খাতে ভোগরত চলতি মূলধন ৩০ লাখ টাকা বর্ধিতকরণ নবায়ন মঞ্জুরী করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ঋণ নথি বলছে, ঋণ আবেদনপত্র থেকে শুরু করে মূল্যায়নকারী মাঠ কর্মকর্তা ও ঋণ মঞ্জুরের সুপারিশকারী তথা শাখা ব্যবস্থাপক কেউ কোথাও পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ২০ লাখ টাকা ৭ শতাংশ হার সুদের কথা উল্লেখ করেননি। তাহলে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রতাপ বিশ^াস কিসের ভিত্তিতে এ ঋণ মঞ্জুরের জন্য বিকেবি খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রেরণ করলেন। আবার অনুমোদনকারী বা মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত কোথাও কেউ গুরুত্বপূর্ণ এ নির্দেশনার বিষয়ে কোন প্রশ্ন তোলেননি। শুধুমাত্র খাবার হোটেল পরিচালনাকারী এত কম মূলধনের দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সকল নির্দেশনা অমান্য করে সাবেক আরএম প্রতাপ কুমার বিশ^াস নিজ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণে গ্রাহককে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছেন।
এদিকে,সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২০২২ সালের ২০ নভেম্বরে প্রতাপ কুমার বিশ্বাস নড়াইলে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে থাকার সুবাদে রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়েই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বিতরণ, বিভিন্ন গ্রাহকের প্রণোদনা ও সিসি ঋণ প্রদানের বিনিময়ে উপকারভোগী গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগের কারণে সম্প্রতি সিলেট বিভাগীয় নিরীক্ষা কার্যালয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ করে শাস্তিমূলক বদলির আদেশ জারি করেন বিকেবি কর্তৃপক্ষ।
ঋণ বিতরণে অনিয়মসহ আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিকেবি নড়াইল অঞ্চলের বর্তমান আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো.বদরুল হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নই। তবে মাঠ পর্যায়ের মূল্যায়নকারী কর্মকর্তা ও সুপারিশকারী কর্মকর্তার প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে ঋণ মঞ্জুর করার কোন বিধান নেই।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কৃষি ব্যাংকের নড়াইল অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (আরএম) প্রতাপ কুমার বিশ^াস বলেন,‘ আমি এখন পদন্নোতির সাক্ষাৎকার পরীক্ষা কেন্দ্রে আছি। পরে কথা বলব বলে এড়িয়ে যান তিনি।
- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ সংবাদ
- Advertisement -spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here