দেশে চীনের সহায়তায় তিনটি বড় হাসপাতাল তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে উপহার হিসেবে রংপুর তিস্তা প্রকল্প এলাকাধীন নীলফামারিতে ১ হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল রয়েছে। বাকি দুটির মধ্যে একটি সাভারের ধামরাই ও আরেকটি চট্টগ্রামে নির্মানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। এ ছাড়া চীন বাংলাদেশকে একটি রবোটিক ফিজিওথেরাপির সেট উপহার দিয়েছে। সেটি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রবিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. অধ্যাপক ডা. আবু জাফর এসব তথ্য জানান। এ সময় প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল খায়ের, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান, প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার সার্বিক পরিস্থিতির বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে চীন সরকার এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল উপহার দেবে। রংপুরে তিস্তা প্রকল্পের আশপাশে এ হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে।
পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চীনের সহায়তায় মোট তিনটি হাসপাতাল নির্মানের কথা জানান। তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্পের আশপাশে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের মাঝামাঝি জায়গায় ন্যূনতম ১২ একর জায়গা খোঁজা হচ্ছে। তবে নীলফামারীর একটা জায়গা পেয়েছি। সেখানে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করবে চীন। এটার দেখভাল করছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। আর একটি হাসপাতাল তৈরি করা হবে সাভার ধামরাইয়ে। এটি হবে পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় আহতদের সেবা দেওয়া হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৫০০ থেকে ৭০০ শয্যার আরও একটি হাসপাতাল তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এটা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এর বাইরে চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রামে বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিট পরিচালিত হচ্ছে।
রবোটিক ফিজিওথেরাপির সেট দিয়েছে চীন: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূতকে রবোটিক ফিজিওথেরাপির সেট উপহার দিতে বলেছিলাম। এটি শুধু আন্দোলনে (জুলাই অভ্যুত্থান) আহতদের জন্য না, ভবিষ্যতেও দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য লাগবে। চীন আমাদের কথা রেখেছ। একটি সেট উপহার হিসেবে দিয়েছে। সেটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে আছে। এটা স্থাপন করতে ছয় হাজার স্কয়ার ফুটের মতো জায়গা লাগবে। সেটি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বিএসএমএমইউ) স্থাপন করা হবে এবং আন্দোলনে আহতদের জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে। সেখানে তারা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে পারবে। এজন্য একটি দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ও ব্যাংকক থেকে বিশেষজ্ঞ আনা হবে। আমরা উত্তরবঙ্গে এবং চট্টগ্রামেও রবোটিক ফিজিওথেরাপি বসাতে চাই, যাতে ওখানকার রোগীদের এখানে ফিজিও থেরাপি দিতে আনতে না হয়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৪৩ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনকে ব্যাংককে, ১৬ জনকে সিঙ্গাপুরে এবং একজনকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। এক রোগীর জন্য সাড়ে ছয় কোটি এবং আরেকজনের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। আরও ৫২ জনকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তাদের মধ্যে ২১ জনকে তুরস্ক ও ৩১ জনকে পাকিস্তানে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে। চিকিৎসার জন্য যাদের বিদেশে পাঠানো হয়েছে বা হবে, তাদের ৭০ শতাংশ সাধারণ মানুষ। বাকি ৩০ শতাংশ ছাত্র।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে এ পর্যন্ত ৮৬৪ জন শহীদের তালিকা করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের তালিকায় ১৪ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছেন। তবে এই সংখ্যায় পরিবর্তন আসছে। প্রকৃত নিহত ও আহত ব্যক্তির তথ্য যাচাইয়ের কাজ এখনো চলমান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা থেকে চলে গেলে আহত ব্যক্তিদের কী হবে, তা নিয়ে কারও কারও মনে সংশয় আছে। ভবিষ্যতে তাদের যেন চিকিৎসা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য সঠিকভাবে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করা, হেলথ কার্ড করাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ২১ জনের দুই চোখ এবং ৪৫০ জনের এক চোখ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। জীবন বাঁচাতে ১৭ জনের পা এবং ৪ জনের হাত অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আন্দোলনে আহত এখনো দুইশ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঝুঁকিমুক্ত থাকতে চান বলে অনেকে হাসপাতাল ছাড়ছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সরকার অপারেশন প্ল্যান (ওপি) থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সেগুলো পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্প ছিল। আমরা চাইছি ওপি থেকে বেরিয়ে আসতে, স্বনির্ভরশীল হতে। ওপি থেকে বেরিয়ে এলে মানুষ যাতে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। তবে ওপি আর এক্সটেনশন হচ্ছে না- এটা বলতে পারি।