পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, গত ছয় মাসে বাংলাদেশ বিদেশি দেশগুলোর কাছে এই বিশ্বাস অর্জন করেছে যে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদেশি বন্ধুদের মধ্যে সন্দেহ ছিল। তারা ভাবছিল এখানে কী ঘটছে ও এরপর কী ঘটবে? আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা তাদের আশ্বস্ত করতে পেরেছি যে, বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে এত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কিছু “বাধা” অনিবার্য ও ব্যাপকভাবে সম্ভাব্য ছিল।
গত ছয় মাসে বৈদেশিক সম্পর্ক সম্পর্কিত সরকারের অর্জন সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সেই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি ও বিশ্বব্যাপী বিপুল সমর্থন পেয়েছি।’
তিনি বলেন, অর্থনীতি হোক বা রাজনীতি, দেশ সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে এবং ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সফলভাবে বোঝাতে পেরেছি।’
উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস গত ছয় মাসে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল আন্তর্জাতিক সমাবেশে যোগ দিয়েছেন এবং যথাযথ সম্মান অর্জন করেছেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমরা ড. ইউনূসের বিশ্বব্যাপী ভাবমর্যাদাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, বাণিজ্য এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি এগিয়ে চলেছে, যদিও অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ‘আমাদের রপ্তানি স্থিতিশীল রয়েছে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ রেমিট্যান্সের সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু সমস্যাগুলোও সমাধান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য এবং আমরা বিশ্বাস করি, আমরা তা সফলভাবেই করেছি।’
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক
তৌহিদ হোসেন বলেন, পাকিস্তানের সাথে বৈরিতার সম্পর্ক’ বজায় রাখার কোনও কারণ নেই।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক টানপোড়েনে রাখার একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রয়াস ছিল, তবে আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছি। পাকিস্তানও সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে এবং আমরা তা স্বাগত জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবেচনা অনুসারে দক্ষিণ এশীয় দুটি দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্র যোগাযোগ পুনরায় চালু করা উভয়ের জন্যই লাভজনক।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দুই দেশের মধ্যে কিছু সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে ‘যদি আমরা এই বিষয়গুলিতে স্থির থাকি, তাহলে কোনও পক্ষই লাভবান হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের স্বার্থ রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করব। তবে একই সাথে আমরা পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ককে অন্য যে কোনো দেশের মতোই দেখতে চাই।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইসলামাবাদের সাথে তার সম্পর্ককে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে চায় না, বরং নতুন করে যোগাযোগের মাধ্যমে সর্বাধিক সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এক দশক পর পাকিস্তানের বেসরকারি বিমান সংস্থা জিন্নাহ এয়ারকে করাচি-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার অনুমতি দিয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এপ্রিল মাসে ঢাকা সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।